যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত খোদ বাংলার রাজ্যপাল? যে ভয়ানক অভিযোগ সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে

CV Ananda Bose: বৃহস্পতিবার রাতেই রাজভবনে রাত্রিবাসের কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তার আগেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানিয়ে বসলেন ওই মহিলা।

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে যখন রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল, সে সময় সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের রাজভবনে সেফ হোম খুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাজ্যপাল। এবার তাঁর বিরুদ্ধেই উঠল যৌন হেনস্থার অভিযোগ। বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মহিলা। গোটা ঘটনায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্যে।

বৃহস্পতিবার রাতেই রাজভবনে রাত্রিবাসের কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এ দিন রাতেই কলকাতায় আসেন মোদি। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজভবনেই যাওয়ার কথা তাঁর। তবে তার আগেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানিয়ে বসলেন ওই মহিলা। নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মচারী বলে দাবি করেছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগকারিণী যখন হেয়ার স্ট্রিট থানায় আসেন, সেসময় লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও রয়েছেন থানায়। রয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।

পুলিশ আরও জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ রাজভবনে পুলিশ ফাঁড়ির ওসির ঘরে পৌঁছন ওই মহিলা। যিনি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেন। জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিনী রাজভবনের পিস রুমের অস্থায়ী কর্মী। তাঁকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যপাল একাধিক বার যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। মহিলার অভিযোগ পাওয়ার পরেই রাজভবনে পৌঁছন হেয়ার স্ট্রিট থানার অ্যাডিশনাল ওসি। তাঁর সামনেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। এর পর ওই মহিলাকে থানায় নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে মহিলাকে জেরা করে ঘটনাক্রম জানার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: ‘ফেরার’ রেভান্নার বিরুদ্ধে জারি লুক আউট নোটিস! বিজেপি-ঘনিষ্ঠ নেতাকে ধরতে সাহায্য করবেন মোদি-শাহরা?

রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ ওঠার পরেই রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। সুযোগ পেয়েই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূল। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত লেগেই রয়েছে রাজ্যের। গত মার্চ মাসের রাজ্যপালের সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান সিভি আনন্দ বোস। সংবিধানের দেওয়া ক্ষমতার পরোয়া না করেই তিনি লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় একটি নিজস্ব নির্বাচনী ব্যবস্থা চালাচ্ছেন। এমনকি, নির্বাচন কমিশন থাকা সত্ত্বেও বাংলার মানুষের জন্য অভিযোগ জানানোর একটি আলাদা পোর্টাল খুলেছেন রাজ্যপাল বলে অভিযোগ জানায় তৃণমূল সরকার। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়। রাজ্যপালের সন্দেশখালি সফর এবং তারপর তৃণমূলকে নিশানা করে তাঁর বক্তব্য, সব কিছু মিলিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চলছিলই।

ফলে রাজ্যপাত সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরেই একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ইতিমধ্যেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভয়াবহ! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় যাচ্ছেন। রাজভবনে তাঁর রাত্রিবাস করার কথা। তার মধ্যেই এক মহিলা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি আজ যখন রাজভবনে যান রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে, তখনই তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। অভিযোগকারিণীকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটি মেয়ের শ্লীহতাহানি হয়েছে। এটা তো ক্ষমাযোগ্য নয়। এটার তো বিহিত হওয়া দরকার। এতে কোনও চেয়ার (পদ) অভিযুক্তকে রক্ষাকবচ দিতে পারে না। সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে সবাই এত সরব ছিল। এখন সবাই কোথায়? আমরা তো কখনও বলিনি, সন্দেশখালিতে কিছু হয়নি। এখন যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও মানুষের মুখ খোলা দরকার। এ সবের জন্য বাংলার বদনাম হচ্ছে। বাইরে থেকে এসে বাংলাকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।’’ সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এদিকে, শ্লীলতাহানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল বোসের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।

আরও পড়ুন: কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থার ‘শাস্তি’? ব্রিজ ভূষণের ছেলেকে এবার টিকিট বিজেপির

তবে এই প্রসঙ্গে ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায় জানান, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনও দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে। এই ধরনের অভিযোগ এর আগে কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উঠেছে কিনা বলা শক্ত বলেই জানান তথাগত। অপরাধ প্রমাণ হলে কী হতে চলেছে, তা এখনও পরিষ্কার। আদৌ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার প্রক্রিয়াও স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের নেপথ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলেও মনে করছেন তথাগত। রাজ্যের একের পর এক দুর্নীতি ও সন্দেশখালি কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতেই রাজ্যপালকে ফাঁসানো হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল।

More Articles