সত্যিই গ্রেফতার হবেন নেতানিয়াহু? গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরোলে কী হতে চলেছে ইজরায়েল-প্রেসিডেন্টের সঙ্গে?

Isreal Gaza Conflict: একদিকে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের আগ্রাসন, অন্য দিকে ইরানের সঙ্গে ক্রমাগত বেড়ে চলা সংঘাত। এরই মধ্যে নয়া সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোণঠাসা ইজরায়েল। দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ একাধিক দেশ সওয়াল করেছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই গাজায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৪ হাজার। গোটা গাজাকে গণকবরে পরিণত করেছে ইজরায়েলি বাহিনী। এবার সব ছেড়ে গাজার রাফাহ শহরের দিকে এগিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। হামাসকে শেষ করতে এবার রাফাহ উড়িয়ে দিতে চায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার।

একদিকে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের আগ্রাসন, অন্য দিকে ইরানের সঙ্গে ক্রমাগত বেড়ে চলা সংঘাত। এরই মধ্যে নয়া সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু ও ইজরায়েলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ এনেছে হেগের আন্তর্জাতিক আদালত। আর সেই অভিযোগে যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। যে কোনও মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে জারি হতে পারে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

আরও পড়ুন: রাফাহতে ইজরায়েলের ভয়াবহ হামলার মধ্যেই নেতানিয়াহুর গ্রেফতারির আশঙ্কা! কোন পথে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত?

শুধু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুই নয়, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং বেশ কয়েকজন প্রতিরক্ষা সচিব রয়েছেন সেই তালিকায়। আন্তর্জাতিক আদালত ২০২১ সাল থেকে ইজরায়েলের দ্বারা সংঘটিত সমস্ত যুদ্ধপরাধ খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইজরায়েল অধিকৃত ওয়েস্টব্যাঙ্কে দীর্ঘদিন ধরেই হিংসা ছড়িয়েছে ইজরায়েল। সেই সমস্তই খতিয়ে দেখছে হেগের আদালত। নেতানিয়াহু-সহ ওই সব ইজরায়েলি মন্ত্রীদের গ্রেফতারি আটকাতে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইজরায়েল। কূটনৈতিক স্তরে আমেরিকা সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা আটকানোর চেষ্টা করছে বলে খবর।

ইজরায়েলের প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্তেই নেতানিয়াহুর পাশে থেকেছে আমেরিকা। তবে সাম্প্রতিক কালে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গে আমেরিকার সঙ্গে মতের অমিল হয় ইজরায়েলের। আমেরিকার বারবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়নি ইজরায়েল। সেই চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা। গত সোমবারই এ নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরবে যান মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এদিকে, রাফাহ শহরে ইজরায়েলের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার উপরেই ভরসা রেখেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

এরই মধ্যে দিন দুয়েক আগে ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী ইজরায়েল কাটজ অন্যান্য় দেশের ইজরায়েল দূতাবাসগুলিকে বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত থেকে কোনও পদক্ষেপ করলে জোরালো ইহুদি-বিরোধী প্রতিক্রিয়ার মধ্য়ে পড়তে হতে পারে তাদের। তার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইজরায়েলি দূতাবাসের তরফে।

এরমধ্যে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কন জানিয়েছেন, হামাসের সামনে ইজরায়লের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রয়েছে। গাজার মানুষ ও হামাসের জন্য যা সুবর্ণ সুযোগ বলেই মনে করছেন ব্লিঙ্কন। আমেরিকা আশাবাদী হামাসের তরফের থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে। ফের আরও একবার হামাসের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ইজরায়েলের। যা হতে চলেছে কায়রোতে। এবারেও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে কাতার ও মিশর। নতুন এই সম্ভাবনার মধ্যেই গাজায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। প্রায় প্রতিদিনই ২৫ -৩০ জন করে বাসিন্দার মৃত্যু হচ্ছে গাজায়। রাফাহতেও লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

একদিকে ইরানের সঙ্গে উস্কে ওঠা যুদ্ধ পরিস্থিতি, তার উপর আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আসা প্রবল চাপ, সব মিলিয়ে যথেষ্ট কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর আমাত্যবর্গ। এদিকে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এরই মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী ইজরায়েলি বাহিনীর পাঁচটি শাখা খুঁজে পেয়েছে ওয়াশিংটন। এই প্রথম ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা। একদিকে যেখানে আইসিসি-র গ্রেফতারি পরোয়ানা আটকানোর জন্য আমেরিকার মুখের দিকেই চেয়ে রয়েছে ইজরায়েল, সেখানে আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই।

আরও পড়ুন:ইরানকে হামলার জবাব ইজরায়েলের, নেতানিয়াহুর হাতে রাফাহ দিয়ে যুদ্ধ থামাতে পারবেন বাইডেন?

তবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার মতো কোনও পুলিশ বাহিনী নেই। ফলে আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে নেতানিয়াহু বা ইজরায়েলি সরকারের সদস্যদের হাজিরা দেওয়ার সম্ভাবনাও কম। তবে এই মুহূর্তে ইজরায়েলেরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ইজরায়েলি নেতাদের স্বাধীনতা ব্যাপক হরণ হবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমল। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বৈঠকগুলোতে যোগ দেওয়া কঠিন হবে নেতানিয়াহুর পক্ষে। ঠিক যেমনটা হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে। পুতিন একমাত্র সেইসব দেশেই ভ্রমণ করতে পারেন, যা আইসিসি-র সীমার আওতায় পড়ে না। তবে বাস্তবে ঠিক কী হতে চলেছে, তা বলা শক্ত। সত্যিই কি আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেফতারির পরোয়ানার মুখে পড়বেন নেতানিয়াহু? নাকি প্রতিবারের মতোই আমেরিকার সহায়তায় বিপদ এড়াবে ইজরায়েল? আপাতত সেটাই দেখার অপেক্ষা।

More Articles