নক্ষত্রের দোষ নাকি শত্রুর বাড়বাড়ন্ত, কেন বারবার খাদের অতলে তলিয়ে যান কুণাল ঘোষ?

Kunal Ghosh: সম্প্রতি তৃণমূলত্যাগী নেতা তাপস রায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় কুণাল ঘোষকে। সেই নিয়ে বিতর্ক উস্কে ওঠে। সেই মঞ্চেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় কুণালকে।

আগেই গিয়েছিল তৃণমূল মুখপাত্রের পদ। তার পর দলের রাজ্য সম্পাদকের পদখানিও হাতছাড়া হল তাঁর। তিনি কুণাল ঘোষ। বরাবরই সাহসী, ঠোঁটকাটা, দরাজ অথচ রাজনীতি-ভাগ্যে যেন তাঁর অভিসম্পাত আছে। যেন স্রেফ পরিণতিবিহীন অনন্ত পাহাড়ভাঙাই তার নিয়তি। না হলে বারবার কেন তীরে এসেই তরী ডোবে কুণালের! দেশ জুড়ে চলছে লোকসভা ভোট। এর মধ্যেই ফের বড় উলটপালট তৃণমূলের অন্দরে। বুধবার দলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল কুণাল ঘোষকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

তৃণমূলের তরফে জারি করা ওই বিবৃতিতে সাক্ষর রয়েছে দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘সম্প্রতি কুণাল ঘোষ এমন অনেক কথা বলছিলেন যা দলের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এটা বোঝানো অত্যন্ত জরুরকছিল যে, উনি যা বলছেন, তা সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। এর সঙ্গে দলের ভাবনার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ কার্যত দল স্পষ্ট করে দিয়েছে, কুণালের ঠোঁটকাটা এই স্বভাব মোটেই দল পছন্দ করছে না। অন্তত ভোটের এই মরসুমে তো নয়ই। তৃণমূল ওই বিবৃতিতে এ-ও স্পষ্ট জানিয়েছে, এর আগে দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হয়েছিল, এবার তাঁকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরানো হল।

কিন্তু কীসের শাস্তি পেলেন কুণাল? সম্প্রতি তৃণমূলত্যাগী নেতা তাপস রায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় কুণাল ঘোষকে। সেই নিয়ে বিতর্ক উস্কে ওঠে। সেই মঞ্চেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় কুণালকে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাপসকে যে তিনি এক ইঞ্চিও পিছিয়ে রাখতে পারছেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন কুণাল। বক্তৃতাতে কুণাল কিছুটা প্রশংসার সুরেই বলেন, ‘‘তাপস রায় যত দিন জনপ্রতিনিধি ছিলেন, তত দিন মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন। দিন-রাত তাঁর দরজা মানুষের জন্য খোলা থাকত। মানুষ যখন তাঁকে ডেকেছেন তখন পেয়েছেন।’’ আসলে কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও দিনই বনিবনা নেই কুণালের। এমনকী তাপস রায়ের দলত্যাগের মূলেও অন্যতম কারণ নাকি সুদীপ। তাপসের দল ছেড়ে যাওয়া আটকাতে কম চেষ্টা করেনি কুণাল। বারবার তাপসের বাড়িতে গিয়ে বরফ গলানোর চেষ্টা করেছেন। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি। তৃণমূল কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে চার বারের বিধায়ক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেই। আর ক্ষুব্ধ তাপস জোড়া ফুল ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন পদ্মতে। কুণালেরও সুদীপ নিয়ে ক্ষোভ কম নেই। এতদিন পরে এক মঞ্চে তাপসকে একসঙ্গে পেয়ে সেই ক্ষোভই কি জলসার পায়? নাকি পুরনো সম্পর্কের জেরে প্রকাশ্য মঞ্চেই বিজেপি প্রার্থীর উন্মুক্ত প্রশংসা করে বসেন কুণাল? রাজনৈতিক মহল হাঁ হয়ে দেখেছে, অকপট, ভানহীন, দরাজ গলায় তাপস রায় যোগ্য প্রার্থী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেই মঞ্চেই তাপসকে পাশে বসিয়েই কুণালকে বলতে শোনা যায়, 'একটিও ছাপ্পা ভোট নয়, মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন'।

আরও পড়ুন: ভোটের আগে বিপাক বাড়ল তৃণমূলের? কেন দলীয় পদ ছাড়লেন কুণাল?

আর তারপরে বুধবার যা হওয়ার তা-ই হল। দলের তরফে অপসারণ করা হল কুণালকে। এদিকে, ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন কুণালও। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজেই পদ ছাড়তে চেয়ে দলকে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘আমি নিজেই যে পদ ছেড়েছি, সেখান থেকে আমাকে সরিয়ে কী আনন্দ হলো জানি না। তা সত্ত্বেও আমি সব দায়িত্ব পালন করেছি।’ পাশাপাশি তাপস রায়ের সঙ্গে এই মোলাকাত যে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া কিছুই নয়, তা-ও বারবার জানিয়েছেন তিনি। কুণালবাবুর যুক্তি, তিনি তো বিজেপির ডাকে সেই রক্তদান শিবিরে যাননি। গিয়েছিলেন উদ্যোক্তাদের ডাকে। সেখানে পুরনো সহকর্মীর সঙ্গে দেখা হওয়াটা যে কাকতালীয়, তা বারবার স্পষ্ট করেছেন কুণাল।

তবে সুদীপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাঁর আজকের নয়। একাধিক বার তাঁকে নিয়ে একযোগে সরব হতে দেখা গিয়েছে কুণাল ও তাপসকে। দল ছাড়ার পরেও তাপসের সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরেনি, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সেদিনের রক্তদানের মঞ্চে, যা মোটেই ভালো ভাবে নেয়নি দল, এমনকী শীর্ষ নেতৃত্বও কূপিত বলে খবর। কুণাল অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় থেকেই জানিয়েছেন, 'যাঁরা নিয়মিত এলাকায় যোগাযোগ রাখেন, ওই রক্তদান শিবিরে তাঁদেরকেই ডাকা হয়েছিল৷ শুধু ভোটের সময় রাস্তায় বেরোলে তো হয় না৷ কেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্তদান শিবিরে ডাকল না, ভেবে দেখা উচিত৷ তাপস রায় ভাল বলেই তো তাঁকে দলে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ খারাপ হলে তো দলে রাখার চেষ্টা হত না৷’

শুধু তাপসের প্রশংসা নয়। দলের কুণালের উপর ক্ষোভ জমেছে অনেকদিন থেকেই। একেই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল। ভোটের মুখে এসএসসি নিয়ে হাইকোর্টের রায় সেই অস্বস্তি দ্বিগুণ করেছে। সে সব বিষয়ে বারবার মন্তব্য করেছেন কুণাল। দীর্ঘদিনের সাংবাদিক কুণাল যে বাকযুদ্ধে দক্ষ, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। এর আগেও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি, যা কার্যত অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূলেরই। দলের পদ থেকে বহিষ্কারের পর তা নিয়ে আরও একবার তোপ দেগেছেন কুণাল। কার্যত বোমা ফাটিয়ে বলেছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে চাকরি বিক্রি করে টাকা তুলছেন, তা আগে থেকেই জানত দল। এদিকে কুণালের বক্তব্য, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই পার্থর দুর্নীতির বিষয়ে জানতে পারে দল। তাই তৃতীয় দফায় সরকার গঠিত হলে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়নি পার্থকে। কুণাল সংবাদমাধ্যমের কাছে এও দাবি করেছেন, এই শিক্ষা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এক মন্ত্রী এখনও জেলের বাইরে আছেন। তবে তিনি সেই মন্ত্রীর নাম বলেননি। তবে দলকে উদ্দেশ্য করে কুণালের হুঁশিয়ারি, আশা করি দল এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে না, যেখানে আমাকে সেই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করতে হবে। সম্প্রতি দেবের বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন কুণাল। মিঠুন চক্রবর্তী নিয়ে নিয়ে দেবের অবস্থানের কড়া নিন্দা করেন তিনি।

এখানেই শেষ হয়নি কুণাল-উবাচ। তিনি আরও বলেছেন, 'যে চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে রয়েছেন, তাঁদের প্রতি আরও আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারত। সরকারের তরফ থেকে আরও মানবিকতা দেখানো উচিত ছিল। যেহেতু পাপগুলো, অনিয়মগুলো, ভুলগুলো আমাদের তরফ থেকে শুরু হয়েছিল, সেগুলিকে সামলে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা যেত। মুখ্যমন্ত্রীকে পুরোপুরি সঠিক রিপোর্টই দেওয়া হয়নি।'

এদিকে কুণালকে অপসারণের দলীয় বিবৃতি সামনে আসার পরই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কুণাল। ডেরেক ও'ব্রায়েনকে নিশানা করে তিনি বলেন, 'আমি তো আগেই মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকতে চাই না'। 'সোশাল সাইট থেকেও আমার এই দুই পদ মুছে দিয়েছিলাম'। 'তারপরে এই ক্যুইজ মাস্টার আমাকে পদ থেকে অপসারণের কথা বলে কী বোঝাতে চাইলেন?' বুধবার দলের সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর কুণাল দাবি করেছেন, তিনি আগেই নাকি ওই পদ ছেড়েছেন। তাঁর বক্তব্য, নিজেই যে পদ ছেড়েছেন, তা থেকে তাঁকে সরিয়ে কী আনন্দ মিলল? এ সংক্রান্ত কোনও অফিশিয়াল কমিউনিকেশন পাননি বলেও দাবি করেছেন কুণাল। তবে মনে রাখতে হবে এই নির্দেশ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকেই এসেছে। কারণ চিঠিতে মমতার ঠিকানা আছে। পাশাপাশি সেই নির্দেশে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সায় রয়েছে, তা-ও বলাই বাহুল্য। তবে বনিবনা না হলেও দল না ছাড়ার বার্তাই মিলেছে তাঁর তরফে প্রাথমিক ভাবে। বারবার তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সৈনিক হয়েই থাকতে চান তিনি।

সত্যিই কি তাই! কুণাল ঘোষের উত্থানপর্ব কারওর অজানা নয়। সারদা মামলায় নাম জড়িয়ে ২০১৩ সালে প্রথম বার গ্রেফতার হন কুণাল। সেই ঘটনার কেটে গিয়েছে প্রায় দশ বছর। তিন বছরের বন্দিদশা কাটিয়ে ছন্দে ফেরেন কুণাল। তৃণমূলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবেও দেখা যায় কুণালকে। তৃণমূলের বেশ কয়েকটি গুরুদায়িত্বও দেওয়া হয় কুণালকে। সব ঠিকই চলছিল। বিপদ বাধায় কুণালের ঠোঁটকাটা স্বভাব। মধ্যিখানে চওড়া হয়ে উঠেছিল দলের ভিতরেই নবীন ও প্রবীণের দ্বন্দ্ব। সেসময় একাধিক বার অভিষেকের পক্ষে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে কুণালকে। কিছুদিন আগে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের একটি অনুষ্ঠানে মমতার ছবি থাকলেও রাখা হয়নি অভিষেকের ছবি। সে ব্যাপারে অভিষেকের পক্ষ নিয়ে জোর প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল কুণালকে। দলের অন্দরে যে ভাঙনের রেখা ক্রমশ চওড়া হচ্ছিল, তার নেপথ্যে কুণালের মতো কান্ডারীরা ছিলেন বলেই মনে করা হয়েছে নানা মহলে। তবে আজ এই ভোট মরশুমে যখন হরিশ চ্যাটার্জী রোড থেকেই চিঠি আসছে, এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্ঞাতসারেই যা ঘটার ঘটছে, রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে আমে-দুধে মিলে গিয়েছে। আঁটির মতোই গড়াগড়ি খাচ্ছেন কুণাল।

একটা কথা ঠিক, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণালকে তার রাজনৈতিক ইনিংসের দ্বিতীয় পর্বে দলের সাংগঠনিক পদেই দেখা গিয়েছে। তিনি সে অর্থে নেতা নত, বরং যোগ্য মুখপাত্র, মর্মে মর্মে বুঝেছে তৃণমূল। চোস্ত সাংবাদিক, তাঁর বাগ্মিতা নিয়েও কথা বলার জায়গা নেই। তাই বারবার ঝাঁঝালো তরজায় শিখণ্ডী হয়েছেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কি জনপ্রিয়তা কমছিল কুণালের? কিছুদিন আগেই দেশ পত্রিকার একটি বিতর্কসভায় তার উপরে চড়াও হন দর্শক। সহ-বক্তারা কোনও মতে সামাল দেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বারবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। কুণাল ঘোষ কি ইদানীং দলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল? কেন তাঁকে কখনও জনপ্রতিনিধি করার কথা ভাবেনি তৃণমূল? ইমেজ নিয়ে দুশ্চিন্তায়?

এরই মধ্যে আবার দানা বাঁধছে কুণালের বিজেপি-যোগের জল্পনা। যদিও কুণাল বারবার বলছেন, তিনি তৃণমূলের সৈনিক হয়েই থাকতে চান। তবে কুণালের অপসারণের পর বিজেপির অন্দরে যেভাবে সাড়া জেগেছে, তাতেই উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এমনিতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়ের সঙ্গে কুণালের দহরম-মহরম। কুণালকে অপসারণের পরেই তৃণমূলের নিন্দা করতে সময় নেননি তাপস। তাঁর বক্তব্য, 'এটা ওদের অন্তর্দলীয় বিষয়। কিন্তু তার মানে কি তৃণমূলে সৌজন্য বা গণতন্ত্রের কোনও জায়গা নেই? এর পর বিয়েবাড়ি, সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেও কি ওরা তালিকা দেখে যাবে? দু'মাস যখন কুণাল জেল খাটছে, সেই সময় প্রতিদিন বাডিতে বসে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসত, মজা নিত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নিশ্চয়ই সেটা ও ভুলে যায়নি! কতজনকে শো-কজ করবে, কতজনকে সাসপেন্ড করবে! সুদীপকে আড়াল করতে গিয়ে উত্তর কলকাতায় দলটার কী অবস্থা, তা কারও অজানা নয়।'

শুধু তাপস নয়, আসরে নেমেছেন বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা দিলীপ ঘোষও। কুণালকে পদ থেকে সরানোর ঘটনাকে 'অমানবিক' আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'দেব কেন মিঠুনের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রশংসা করেছেন, সেদিন এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন কুণালবাবু। আজ আর তাঁর উপরই কোপ নামল। রোজই কেউ না কেউ পার্টি বদলায়। দলত্যাগী কারও সঙ্গে বসে যদি কেউ কথা বলে, তাহলে তাঁকেও তাড়িয়ে দেবে? তৃণমূলের মতো দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত, নইলে এই অমানবিকতা বন্ধ হবে না।' এই ঘটনা তৃণমূলের 'অসহিষ্ণুতার' নিদর্শন বলে আখ্যা দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, 'তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে কতটা অসহিষ্ণু, এই ঘটনা তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দুই দলের লোকজনই ছিলেন। সেখানে একজনের প্রশংসা করলে যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেবও তো আমার এলাকায় গিয়ে আমার প্রশংসা করেছে! রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন এটি।' এমনকী যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এতদিন কড়া সমালোচনা করতে অভ্যস্ত ছিলেন কুণাল, সেই অভিজিৎ পর্যন্ত পাশে দাঁড়িয়েছেন কুণালের। তাঁর কথায়, সেই অভিজিৎ বললেন, 'কুণাল ঘোষ অতটা খারাপ নন'। অভিজিতের বক্তব্য, 'কুণাল ঘোষ আমার বিশেষ পরিচিত। মানুষটিকে যত খারাপ বলে প্রচার করা হয়, ততটাও খারাপ নন উনি। তৃণমূলে আছেন বটে, আমাকে আক্রমণও করেন, কিন্তু আমার বন্ধু উনি। একজনের সঙ্গে মঞ্চে উঠেছেন বলে একজনকে সরিয়ে দেওয়া হবে! এই দলে কোনও গণতন্ত্র নেই। পিসি-ভাইপো একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন।'

আরও পড়ুন: কুণাল ঘোষের পরামর্শেই বিজেপিতে বিচারপতি অভিজিৎ?

এ সব দেখে-শুনে কুণাল ঘোষের বিজেপি-যোগের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না ওয়াকিবহাল মহল। এ-ও বলা হচ্ছে, কুণাল হাটে হাঁড়ি ভাঙতে শুরু করলে তৃণমূলের বিপদ বাড়বে।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, রাজ্যের বিরোধী নেতা তথা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কড়া সমালোচক হিসেবে সবসময় তৃণমূলের হয়ে লড়ে গিয়েছেন কুণাল। শুভেন্দুর একটা কথাও তিনি হাটের মাঝে পড়তে দেননি। তার আগেই তাঁকে বিদ্ধ করেছেন আক্রমণে। তিনি যে ভাষায় শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন তার প্রতিতুলনা তৃণমূলে খোঁজা বৃথা।

কুণাল যদি সত্যিই তৃণমূল ছাড়েন, তাহলে কতটা ক্ষতি দলের ভেবেছেন সুপ্রিমো? ভোটের মধ্যে সেই ফায়দাটাই তোলার জন্য বসে রয়েছে বিজেপি, এ কথা মাথায় এসেছে কুনালের সেনাপতির? কী হতে চলেছে কুণাল ঘোষের পরবর্তী পদক্ষেপ? সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য রাজনীতি।

More Articles