'ফেরার' রেভান্নার বিরুদ্ধে জারি লুক আউট নোটিস! বিজেপি-ঘনিষ্ঠ নেতাকে ধরতে সাহায্য করবেন মোদি-শাহরা?

Prajwal Revanna sex scandal: যতদূর জানা গিয়েছে, আপাতত জার্মানির মিউনিখে রয়েছেন তিনি। আগামী ১৫ মে দেশে ফেরার জন্য টিকিট বুক করেছেন তিনি।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার নাতির বিরুদ্ধ লুক আউট নোটিস জারি করেছে কর্ণাটক পুলিশ। খোদ বিজেপির জোটের সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না। আড়াই হাজারেরও বেশি মহিলাকে যৌনহেনস্থা ও তাদের অশ্লীল ভিডিও রেকর্ড করার নালিশ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চলতি লোকসভা ভোটের প্রার্থী রেভান্না অবশ্য ভোটপর্ব মিটিয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন বিদেশে। প্রশ্ন, মোদি-শাহের আশীর্বাদী হাত মাথায় রাখা যার, সেই রেভান্নাকে কি গ্রেফতার করার ক্ষমতা আদৌ প্রশাসনের রয়েছে।

বিজেপি ঘনিষ্ঠ যৌন হেনস্থাকারীদের কতটা শাস্তি এ দেশে হয়, তার বড় প্রমাণ বিজেপির বাহুবলী নেতা ও সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং। দীর্ঘদিন ধরে পদের সুযোগ নিয়ে দেশের মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা করে গিয়েছেন বিজেপির এই বাহুবলী নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে কুস্তিগিররা সরব হলেও দেশের শাসক দল কিন্তু ব্রিজভূষণেরই পাশে থেকেছে। দেশজোড়া সেই বিতর্কের মাঝে এবার সেই ব্রিজভূষণের ছেলেকে লোকসভা ভোটে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেই ছেলে। যৌন হেনস্থার অভিযোগে ভারতীয় রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতিপদ খুইয়েছেন ব্রিজভূষণ। এবার সেই ক্ষতিপূরণ কি ছেলেকে ভোটে দাঁড় করিয়েই দিচ্ছে বিজেপি?

আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে সরব! কেন যৌনহেনস্থায় অভিযুক্ত রেভান্নার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিজেপি?

বিধানসভা ভোটে জিতে কর্ণাটকে এখন ক্ষমতায় কংগ্রেস। সেই রাজ্যেরই হাসান কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল জেডিএস নেতা প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে। কর্ণাটকে জেডিএসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে বিজেপি। জেডিএস নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তার বিরুদ্ধে সিট গঠন করে কর্ণাটক সরকার। যদিও গোটা ঘটনায় দায়ই কংগ্রেসের উপর ঠেলেছে দেশের শাসক দল। অথচ সে রাজ্যের বিজেপি কিন্তু লাগাতার প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে যে রেভান্নার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ঝুটা। লোকসভা ভোটের মুখে দলের মুখে কালি ছেটাতেই পরিকল্পনা মাফিক করা হচ্ছে গোটা বিষয়টা। কর্ণাটক বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি বাসবরাজ বম্মাই এ-ও বলছেন, রাজ্যের মহিলারা নাকি কংগ্রেস জমানায় সুরক্ষিত নন। এদিকে দেবেগৌড়ার নাতির করা একাধিক অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে প্রজ্জ্বল রামান্নার ভয়ঙ্কর রূপ। পরিচারিকা থেকে পার্টিকর্মী, কেউ-ই বাদ যেতেন তাঁর গ্রাস থেকে। দিনের পর দিন একের পর এক মহিলার সঙ্গে ওই ঘৃণ্য কাজ তিনি চালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।

রেভান্নার বিরুদ্ধে ওঠা মামলা নিয়ে চর্চা শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবারই হাসান এলাকার সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে লুর আউট নোটিস জারি করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। ভারত জুড়ে সমস্ত ইমিগ্রেশন পয়েন্টগুলিতে জারি করা হয়েছে ওই লুকআউট সার্কুলার। যার অর্থ প্রজ্জ্বল রেভান্না ভারতের যে কোনও চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করলেই, তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হবে।

গত ২৬ এপ্রিল ভোটপর্ব মিটতে না মিটতেই দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান রেভান্না। জানা গিয়েছে, আপাতত জার্মানিতে রয়েছেন তিনি। ব্যাপারটি নিয়ে হইচই শুরু হতেই তাঁকে শোকজ নোটিস ধরায় জেডিএস। পরে তাকে দল থেকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে মহিলা কমিশনও। ইতিমধ্যেই সিট প্রজ্জ্বল ও তাঁর বাবা এইচডি রেভান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ততদিনে রেভান্না বিদেশে চলে গিয়েছেন। ওই সমনের উত্তরে রেভান্না জানান, বেঙ্গালুরুতে নেই বলে তিনি সমনে সাড়া দিতে পারছেন না। দেশে ফিরে আইনজীবীকে নিয়ে তিনি সিটের মুখোমুখি হবেন। এর জন্য সাত দিনের সময়ও চেয়ে নেন তিনি।

রেভান্নার অবশ্য দাবি, এ সমস্ত অভিযোগই মিথ্যে। তাঁকে ফাঁসানোর জন্য এই সব করা হচ্ছে। তবে একজন নয়, দু'জন নয়, আড়াই হাজার মহিলার ভিডিও ধরা পড়েছে তাঁর কাছ থেকে। যাদেরকে যৌনহেনস্থা করেছেন তিনি বলে অভিযোগ। যতদূর জানা গিয়েছে, আপাতত জার্মানির মিউনিখে রয়েছেন তিনি। আগামী ১৫ মে দেশে ফেরার জন্য টিকিট বুক করেছেন তিনি। নিজের ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে গত ২৭ এপ্রিল বেঙ্গালুরু থেকে সোজা এখানে উড়ে আসেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন তাঁর বাড়ির পরিচারিকা। পুলিশের কাছে তিনি জানান, তাঁর বাড়ির সমস্ত মহিলা পরিচারিকার সঙ্গেই এই ব্যবহার করতেন রেভান্না।

আরও পড়ুন:দেশছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাতি, কোন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এই সাংসদ? 

ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন, তিনি যাতে অভিযুক্তের কূটনৈতির পাসপোর্টটি বাতিল করেন। 'ফেরার' সাংসদকে দেশে ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসগুলোর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি তেমনটা করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ভুললে চলবে না, রেভান্নার প্রচারে খোদ কর্ণাটকে এসেছিলেন মোদি। কর্ণাটকে ভোটপর্ব ইতিমধ্যেই মিটে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ এই নেতার অপরাধকে ঢাকার চেষ্টা না করে সত্যিই কি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিজেপি? যেমনটা তারা করেছিল ব্রিজভূষণের ক্ষেত্রে!

More Articles